বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০০৯

ভুমি আইনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস



এই উপমহাদেশে সম্রাট শেরশাহ র্সবপ্্রথমে কবুলিয়ত ও পাট্রা প্রদানের মাধ্যমে ভুমিতে কৃষকের মালিকানা নিশ্চিত করেন এবং ভুমির জন্য দেয় খাজনার পরিমান নিশ্চিত করে দেন যাতে সন্দেহ ও উৎপীড়নের কোন সুযোগ না থাকে ।
সম্রাট আকবর শেরশাহ কর্তৃক প্রবর্তিত পদ্ধতির আরও উন্নতি বিধান করেন।
পরবতর্ীকালে এ দেশের শাকসগন এবং ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার দেওয়ানী লাভের পরেও দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে উক্ত নীতি ও পদ্ধতি অনুসরন করে। ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্ণল জেনারেল নিযুক্ত হয়ে আসেন এবং রাজস্ব আদায়ের পূর্বতন প্রথা পরিবর্তন করে সবের্াচ্চ ডাগকারীর নিকট ৫বছর মেয়াদী (৫সাল) জমিদারী বন্দোবস্ত দেন, পরে ১৭৭৭ সালে বার্ষিক ভিওিতে বন্দোবস্ত দেন।পাঁচ সাল ও এক সাল ন্যায় স্বল্পকালীন বন্দোবস্ত প্রথা রাজস্ব আদায়কারি জমিদারগনকে একটা অনিশ্চি ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তারা কৃষকের অবস্থা ও ফসল উৎপাদনের বিষয় বিবেচনা করে উচ্চহারে রাজস্ব আদায় করতে লাগলেন। তারা এজন্য কৃষকদের উপর অত্যাচার ও উৎপীড়ন চালাতে দ্বিধা বোত করতেন না, ফলে সকল শ্রেনীর মধ্যে একটি তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।এই অবস্থা দূরীকরনের জন্য লর্ড কর্নওয়ালিশ ১৭৮৯ সাল দশ সালা বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেন এবং ১৭৯৩ সালে ইহাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (permanent settlement) প্রথা হিসেবে বলবৎ করেন। এই পদ্ধতিতে জমিদারগনকে ভুমির মালিক বলে ঘোষনা করা হলে তারা ভুমি ও চাষাবাদেও উন্নয়নের জন্য পুঁজি বিনিয়োগ করবেন, ফলে জমিদার ও প্রজাগনের মধ্যে একটা সদ্ভাব গড়ে উঠবে। তারা মিলিতভাবে বন্যা খরা ইত্যাদি ন্যায় প্রাকৃতিক দুযের্াগ প্রতিরোধের জন্য বাঁধ তৈরী ও সেচের জন্য খাল খনন করে ভুমি ও কৃষির উন্নতি সাধন করবেন।
কিন্তু দুভর্াগ্যবশতঃ তা হল না। যদি তা হলে দীর্ঘ বৎসরের প্রচেষ্টায় বন্যা নিয়ন্ত্রিত হতো, দেশে পাঞ্জাবের ন্যায় শক্তিশালী সেচ ব্যবস্থা গড়ে উঠতো এবং বাংলার পাঞ্জবের ন্যায় শষ্যভান্তর হিসেবে পরিগনিত হতো। ইহার সুফল তাদের সময় এবং অনাগত কালের বংশধরদের জন্য অপরিসীম সুখের কারন হতো।
১৮৭৩ সনে যে কৃষকের কল্যাণের জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু হয়েছিল পরবতর্ীকালে সে কৃষকরাই জমিদারদের দয়ার উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কৃষকরা খাজনাদাতা প্রজা হওয়ার তারা ভুমি হতে যে সময় উচ্ছেদযোগ্য ছিল। পুরাতন জমিদার পরিবারগুলি ধবংস হয়ে যায়, তথার স্থান গ্রহন করে নব্য ধনীক শ্রেনী। এই জমিদার সঙ্গে ক্ষমতাসীন মহলের পারস্পরিক স্র্বাথ-সংশ্লিষ্ট সমর্্পক দ্বারা সুদৃঢ় বন্দনে আবব্দ থাকায় সুযোগে তারা তাদেও দাইত্ব ও র্কতব্য ভুলে গিয়ে ভাগ্য গড়ার জন্য রাজস্ব বৃদ্বি ও আদায়ের জন্য যথেচ্ছাচাওে প্রবৃক্ত হন। ফলে একদিকে জমিদারগনের মর্যদা বৃদ্বি পেতে লাগলো এবং অপরদিকে কৃষক সমাজ ডুবতে থাকলো। জমিদার ও কৃষকগনের মধ্যে সু-সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেল এবং পরস্পর পরস্পরের প্্রতি শত্রু ভাবাপন্ন হয়ে পড়ল। যার ফলে মারা গেলা দেশের অর্থনৈইতিক মূল ভিত 'কৃষি খাত'। ইহার অবশ্যম্ভাবী ফল হলো, প্রায় গোটা ইংরেজ শাসনামল জুড়ে অসংখ্য কৃষক বিদ্রোহের ঘটনা। যদিও চিরস্থায়ী বন্দোবস্থ আইনের শাসনআমল জুরে অসংখ কৃষক বিদ্রোহের ঘটনা। যদিও চিরস্থায়ী বন্দোবস্থ আইনের ৭ম অনুচ্ছেদে রায়ত ও চাষীদেও স্বার্থ রক্ষা,নিরাপত্তা ,কল্যানের জন্য সরকার যখনই মনে করবেন তখনই অনুরুপ আইন বা বিধি প্রণয়ন করতে পারবেন বলে উল্লেক থাকা সত্ত্বেও ৫৬ বৎসরের মধ্যে সরকার চাষীদের কল্যানে এরুপ কোন ব্যবস্তা গ্রহন করেন নাই। এই গুরুতর পরিস্থিতিতে ১৮৫৯ সালে বেঙ্গল ল্যান্ড অ্যাক্ট দ্বারা কৃষকগনের সামান্য স্র্বাথ সংরক্ষনের ব্যবস্থা গৃহীত হয় এবং পরবতর্ীকালে অর্থাৎ ১৮৮৫সনে বিখ্যাত বেঙ্গল টেন্যান্সি অ্যাট পাশ করা হয় এবং ইহা দ্বারা কৃষকদের স্র্বাথ সংরক্ষণ আরও সুদৃঢ় করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

PlugIn.ws - Free Hit Counter, Web Site Statistics, Traffic Analysis