মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০০৯

Allok-Aftab



নতুন চুক্তি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যেও নির্বাচকদের প্রায়ই একটা কথার জবাব দিতে হচ্ছে—আইসিএল ক্রিকেটারদের খবর কী? ‘আইসিএল ক্রিকেটার’ মানে আইসিএল থেকে ফেরা অলক কাপালি-আফতাব আহমেদরা। তাঁরা আবার কবে জাতীয় দলে ফিরবেন কিংবা আদৌ ফিরবেন কি না, সেসব নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল।
ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে আইসিএল ক্রিকেটারদের ‘কুলিং পিরিয়ড’। বিসিবির দেওয়া শর্ত অনুযায়ী তার আগে তাঁদের জাতীয় দলের বিবেচনায় আসার কথা নয়। তবে দলের প্রয়োজন আর পারফরম্যান্স যদি একই বিন্দুতে মিলে যায়, জানুয়ারিতে ভারত-শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে তিন জাতি সিরিজ বা এরপর ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ঢাকা ওয়ারিয়র্সের কারও জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটলেও ঘটতে পারে।
দেশের ক্রিকেটে ফিরেই যে শাহরিয়ার নাফীসরা জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন, ব্যাপারটা তেমন নয়। তাঁদের লক্ষ্য—স্বপ্ন সবই বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে। সবাই এক বাক্যে বলছেন, ‘আগে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম করতে হবে।’ ওপেনার নাজিমউদ্দিন তো মেনেই নিয়েছেন, প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স এখনো দেখাতে পারেননি প্রিমিয়ার লিগে, ‘জাতীয় দলে ফিরতে ভালো পারফরম করতে হবে। আমার এখনো সে রকম পারফরম্যান্স হয়নি। তবে প্রিমিয়ার লিগে আরও ম্যাচ আছে, এরপর জাতীয় লিগ। ভালো করার সুযোগ আছে।’ লিগে গাজী ট্যাংকের হয়ে আট ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত নাজিমের রান ১৮৪। ২০১০ সালে দেশে-বিদেশে অনেক খেলা বাংলাদেশের। তবে চট্টগ্রামের এই তরুণের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী, ‘আমার টার্গেট ২০১১ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের মধ্যেই দলে ফিরতে চাই।’
গাজী ট্যাংকে নাজিমউদ্দিনের অধিনায়ক অলক কাপালিও নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন। লিগে এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচ খেলে রান করেছেন ১৮২। ‘দলের চাহিদা অনুযায়ী আমার ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। তার পরও একটা ম্যাচে রান পেয়েছি, একটাতে অপরাজিত ছিলাম। লিগের বাকি ম্যাচগুলো আর এবারের জাতীয় লিগটাও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ’—বলেছেন অলক। বাংলাদেশ দলের বর্তমান চেহারা দেখে তিনি যেন এটাও বুঝতে পারছেন, শুধু ভালো খেলেই ফেরা যাবে না। লুকিয়ে আছে একটা সূক্ষ্ম লড়াইও, ‘জাতীয় দলে খেলার টার্গেট সবারই থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে এখন যারা খেলছে সবাই ভালো পারফরম করছে। আমাদের ফিরতে হলে ওদের চেয়ে ভালো খেলতে হবে।’
অলক, নাজিমউদ্দিন ছাড়া গাজী ট্যাংকে আছেন আইসিএলের শাহরিয়ার নাফীস ও ফরহাদ রেজা। আট ম্যাচে ৩৩৭ রান, আইসিএল-ফেরত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফর্ম শাহরিয়ারেরই। ব্যাট হাতে আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী বলছেন নিজেকে, ‘মনে হচ্ছে আমার ব্যাটিংটা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে এখন। বয়স, অভিজ্ঞতা মিলিয়ে আমি এখন আগের চেয়ে ভালো খেলছি। বড় কোনো সমস্যা নেই। যদি কোনো সমস্যা থেকেও থাকে খেলতে খেলতেই সেটা ঠিক হয়ে যাবে।’ অলক-নাজিমউদ্দিনের মতো জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে তাড়াহুড়া নেই তাঁরও, ‘ভালো পারফরম করতে পারলে সুযোগ সব সময়ই থাকবে। এ রকম কোনো টার্গেট নেই যে অমুক সিরিজেই খেলতে হবে। যত পারব খেলব। সামনে যে খেলাই আসে প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ—আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। একটা সিরিজ নিয়েই ভাবলে ঠিক হবে না।’
আট ম্যাচে ২৪৭ রান, তার পরও হাবিবুল বাশারের সঙ্গে আইসিএলের অন্য ক্রিকেটারদের মূল পার্থক্য হলো জাতীয় দলে ফেরার চ্যালেঞ্জটা নেই তাঁর সামনে। টেস্ট খেলার চিন্তা এখনো মাথা থেকে ঝেড়ে না ফেললেও ওয়ানডে আর খেলবেন না বলে আগেই জানিয়েছেন। হাবিবুলের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলাটা তাই কেবলই খেলার টানে, ‘প্রথম কথা আমি পেশাদার ক্রিকেটার। যে কাজই করি পেশাদার হিসেবে একটা তো দায়িত্ব থাকেই। খেলার প্রতি উত্সাহের তাই অভাব হয় না।’
উত্সাহে ঘাটতি নেই তাপস বৈশ্যেরও। অনেক পেসারের ভিড়ে আবার জাতীয় দলে ফেরা কঠিন, সিলেটের এই বোলার তার পরও বলছেন, ‘আমি নিজেও জানি এখন প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। তার পরও যদি বোর্ড মনে করে, তাপসকে আবার দেখা যায়, সেটা আমার জন্য ভালো হবে। বলছি না যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটই খেলতে হবে আমাকে। যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই আমি নিজের সেরা সামর্থ্য দিয়ে টিকে থাকতে চাই।’ তবে লিগে এখন পর্যন্ত ৩০২ রান করা আফতাবের চিন্তায় কেবলই ঘরোয়া ক্রিকেট, ‘আগে এখানে ভালো করি। তারপর জাতীয় দলের চিন্তা।’
ফরহাদ রেজা, মোহাম্মদ শরীফ আর মোশাররফ হোসেন—এই তিন বোলিং অলরাউন্ডারই জাতীয় দলে ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তবে অন্য সতীর্থের মতো একই সুর তাঁদের কণ্ঠেও—আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রমাণ করতে হবে নিজেদের। ‘খুব দ্রুতই জাতীয় দলে ফিরতে হবে সে রকম কোনো টার্গেট নেই। সামনে জাতীয় লিগ, প্রিমিয়ার লিগের আরও কিছু ম্যাচ বাকি আছে। ভালো খেলতে থাকলে সুযোগ তো অবশ্যই আসবে’—বলেছেন ফরহাদ। শরীফের চেষ্টা বোলিং-ব্যাটিং মিলিয়েই জাতীয় দলে নিজের অপরিহার্যতার প্রমাণ দেওয়া, ‘আমি চেষ্টা করছি অলরাউন্ডার হিসেবে ভালো করতে। পারফর্মও খারাপ করছি না মনে হয়। জাতীয় দলে অনেক দিন খেলেছি, আবারও খেলতে চাই।’
মোশাররফকে দেশের ক্রিকেট থেকে মাঝখানের বিচ্ছিন্নতা দিচ্ছে নতুন সূচনার উপলব্ধি। নতুন করে সব শুরু করতে চান এই বাঁহাতি স্পিনার, ‘যতদূর জানি বোর্ড আমাদের ব্যাপারে উদারই আছে। তবে আমাদের পারফরম করে ফিরতে হবে। আমি বিষয়টাকে আগের মতোই নিয়েছি। আগে যে রকম ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করে জাতীয় দলে আসতে হয়েছে, এখনো সেটাই করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

PlugIn.ws - Free Hit Counter, Web Site Statistics, Traffic Analysis