
নাজমুল হোসেন একটু নিঃসঙ্গ বোধ করতে পারেন। নির্বাচকেরা কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে ১৪ জনের দলে চার পেসার রাখলেন। অথচ কাল সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের একাদশে পেসার শুধু ওই নাজমুল! বাকি তিনজনই বিশ্রামে। বাংলাদেশ দলের সাত বোলারের তালিকায় নাজমুল ছাড়া ছয়জনই স্পিনার! নাজমুল হোসেন একটু নিঃসঙ্গ বোধ করতে পারেন। নির্বাচকেরা কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে ১৪ জনের দলে চার পেসার রাখলেন। অথচ কাল সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের একাদশে পেসার শুধু ওই নাজমুল! বাকি তিনজনই বিশ্রামে। বাংলাদেশ দলের সাত বোলারের তালিকায় নাজমুল ছাড়া ছয়জনই স্পিনার! রেকর্ডের খাতায় এটি নতুন দাগ রাখল কি না কে জানে, তবে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্ত উইকেটের স্পিন-বন্ধুতা আর জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানদের স্পিন আতঙ্কের কথা ভেবেই। যে আতঙ্ক পাঁচ বছরেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি আফ্রিকার দেশটি। যে আতঙ্ক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপে নিয়মিতই আনছে অভিনবত্ব।২০০৫ সালের হোম সিরিজে ০-২-এ পিছিয়ে পড়েও শেষ তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছিল বাংলাদেশ দল। আর শেষ হাসিটা উপহার দিয়েছিল স্পিনাররাই। মোহাম্মদ রফিক, এনামুল জুনিয়র, অকালপ্রয়াত মানজারুল ইসলাম—পুরো সিরিজেই জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানদের নাকাল করলেন তাঁদের স্পিনের ভেলকিতে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের শেষ ওয়ানডেতে তো তিনজন আর আলাদা আলাদা থাকলেন না, হয়ে গেলেন ‘ত্রয়ী’। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ম্যাচে তিন বাঁহাতি স্পিনার খেলানোর ওই বিরল ঘটনা সিরিজে জিম্বাবুয়ের সহ-অধিনায়ক মুলোলেকি এনকালাকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করল। শেষ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে মুখে বিষণ্ন হাসি ছড়িয়ে বললেন, ‘এর পর বাংলাদেশে এলে বাঁহাতি স্পিনারদের কীভাবে খেলতে হয় সেটা শিখে আসতে হবে।’এনকালার প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেনি তাঁর উত্তরসূরিরা। বাংলাদেশি বাঁহাতি স্পিনারদের সামনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা এখনো আগের মতোই জবুথবু। জিম্বাবুয়েতে খেলে আসা গত সিরিজটার কথাই ধরুন। নিজেদের মাঠেও সাকিব আল হাসান আর এনামুলের বোলিংই বড় আতঙ্ক ছিল জিম্বাবুয়ের কাছে। এ নিয়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে কত না ফিসফাস! বাংলাদেশ বোলারদের ‘সুবিধা’র কথা মাথায় রেখে কেন উইকেট বানানো হলো, কিছু কিছু আড্ডায় সেটা নিয়েও অনেক গবেষণা।হোম কন্ডিশনেই যখন ওই অবস্থা, তখন এ দেশের উইকেটে বাংলাদেশি স্পিনারদের দাপট তো মানতেই হবে জিম্বাবুয়েকে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলতি সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেই টিকে থাকল সেই দাপট। দারুণ ফর্মে থাকা আবদুর রাজ্জাকের তিন ম্যাচে উইকেট—৩, ৫ ও ২। পেসার ডলার মাহমুদের পরিবর্তে কাল তাঁর সঙ্গে যোগ হওয়া আরেক স্পেশালিস্ট স্পিনার এনামুল নিলেন ৩ উইকেট। শুধু কোচ জেমি সিডন্সের কথা মেনেই নয়, পারফরম্যান্স দিয়েও যেহেতু ব্যাটসম্যান সাকিব এখন বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের অন্যতম অস্ত্র—২০০৫ সালের হোম সিরিজের শেষ ম্যাচেরই যেন ছায়া পড়ল কালকের ম্যাচে। রফিক, এনামুল, মানজারুলের মতো কালকের ম্যাচেও ছয় স্পিনারের মধ্যে তিনজনকেই পাওয়া গেল বাঁহাতি—রাজ্জাক, সাকিব, এনামুল। সাকিব কোনো উইকেট পাননি। বাকি তিন স্পিনারের মধ্যে নাঈম ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ নিয়েছেন ১ উইকেট করে।বাংলাদেশের স্পিনারদের উল্টো দিকে জিম্বাবুয়ে দলে সাহসী মানুষ পাওয়া যাচ্ছে একজনকেই—হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। বুলাওয়েতে গত সিরিজে সেঞ্চুরি করেছিলেন, কালও রাজ্জাকের স্পিন-বিষে নীল হওয়ার আগে তাঁর ৮৪ রানের ইনিংসটাই জিম্বাবুয়ে ব্যাটিংকে অক্সিজেন দিল। মাসাদাকজার সময় অবশ্য এমনিতেই খুব ভালো যাচ্ছে এখন। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই সিরিজের মাঝখানে দেশের মাটিতে কেনিয়ার বিপক্ষে উজ্জ্বল ছিল এই ওপেনারের ব্যাট। ১৫৬, ৬৬, ৪৪, ২৩, ১৭৮*—পাঁচ ম্যাচে ৪৬৯ রান, এক সিরিজে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। বাংলাদেশে আসার আগে এ বছর মোট ৯৩৬ রান ছিল মাসাকাদজার নামের পাশে। কালকের ম্যাচের পর সেটি ১০৬৪। রিকি পন্টিংয়ের পর এ বছর ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রান করেছেন কেবল মাসাকাদজাই।কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাসী এই ব্যাটসম্যানও বাংলাদেশের স্পিনারদেরই পক্ষে। প্রতি ম্যাচের আগে-পরে রাজ্জাক-সাকিবদের প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এনকালার মতো জিম্বাবুয়ের এই সহ-অধিনায়কও হয়তো বাংলাদেশ থেকে এবার সেই শিক্ষাটাই নিয়ে যাবেন দেশে—বাঁহাতি স্পিন খেলাটা শিখে আসতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন